ভালোবাসার রকম সকম

ভালোবাসার গল্প (ফেব্রুয়ারী ২০২০)

মোঃআওলাদ হোসেন
  • ৪৫
সন্ধ্যার আকাশে মেঘ জমেছে,ভয়ঙ্কর রুদ্রমুর্তি ধারণ করেছে। হয়তো কিছুক্ষণের মাঝে ঈষাণ কোণ থেকে সবাইকে দেখাবে প্রকৃতি তার নিষ্ঠুর খেলা,ঝড় হতে পারে। তাই,সবাই অনেক আগেভাগেই কাজ সেরে নিজেদের আস্তানায় ফিরে গেছে,এমনকি রাস্তার কুকুরটাও ছুটে চলেছে কোনো এক নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। কিন্তু একজন যুবককে দেখা যাচ্ছে রাস্তার ধারে বন্ধ হওয়া একটি চায়ের দোকানের বেঞ্চিতোকেউ একজন বাড়ির দিকে ছুটতে ছুটতে আচমকা যুবকটিকে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করে,"কী ভাই!বাড়ি যাবেন না? তাড়াতাড়ি বাড়ি যান,ঝড় এলো বলে। "উত্তরের অপেক্ষা না করে লোকটি আবার ছুটে চলে। কিন্তু যুবকটি যেন কিছুই শুনতে পায় নি। সম্মোহিতের মতো পাথর হয়ে বসে আছে সে। তার মনের ভেতর যে ঝড় চলছে সেই ঝড়ের কাছে এ ঝড় কিছুই । স্নিগ্ধ, হ্যা, এই যুবকটির নাম স্নিগ্ধ। সম্পূর্ন নাম:মুমতাহিন ইসলাম স্নিগ্ধ।
আজও বাড়ি থেকে বের হতে দেরি হলো স্নিগ্ধের,তবে একটু বেশিই। ওর সব বন্ধুরা এতক্ষণে মনে হয় পৌঁছে গেছে। প্রত্যেকদিন স্নিগ্ধের দেরি ওরা মেনে নেয়। তবে আজ! আজকের দেরিটা কি এত সহজে মেনে নেবে। আজ যে ওদের একটা বিশেষ দিন। ওদের ক্লাসে নতুন একজন এসেছে,তাকে শুভেচ্ছা জানাবে ওরা সবাই মিলে। হ্যা,স্নিগ্ধরা প্রতিবারই তাদের ক্লাসে কেউ এলে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেয় তাদের নতুন বন্ধুটিকে। এই বুদ্ধিটাও স্নিগ্ধের। কিন্তু,কাজের বেলায় ও থাকে সবার পিছনে। সবাই আগে এসে উপস্থিত হলেও ওর কোনো না কোনো ভাবে দেরি হয়েই যায়। আজকের ব্যপারটাই ধরা যাক,ও সকালে উঠেই তৈরি হয়ে নিলো। কিন্তু যাবার আগেই ঘটলো বিপত্তিটা, ওর মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লো। তাই ডাক্তার ডাকা থেকে যাবতীয় কাজ ওকেই করতে হলো। মাঝে মাঝে তাই স্নিগ্ধের ওর মা-এর উপর ভীষণ রাগ ওঠে। তাই তো আজ রাগের মাথায় বলেই দিলো,"তুমি কি আর অসুস্থ হওয়ার সময় পাওনা,মা? আমার কলেজ যাবার আগেই অসুস্থ হতে হবে!"ওর মা কোনো উত্তর দেয় নি,শুধু ফ্যালফ্যাল করে স্নিগ্ধের দিকে তাকিয়ে ছিলো। উত্তর দিবেই বা কি করে!তিনি যে আর কথা বলতে পারেন না। স্বামীর মৃত্যুতে তিনি এতোই কষ্ট পেয়েছেন যে কথাই বলতে পারেন না৷স্নিগ্ধ আর কথা না বলে হনহন করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। কিন্তু বের হবার আগে দেখতে পেল না ওর মায়ের চোখের কোনায় জমে থাকা পানিটা।
স্নিগ্ধ কলেজে এসে দেখে সবাই এসে গেছে,সবার মুখে বিরক্তির ভাব। মনে মনে ভাবল সবাই বুঝি অনেক ক্ষেপে আছে ওর ওপর। তাই কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বলল,"সরি দোস্তরা,একটু দেরি হয়ে গেলো। জানিসই তো বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মা কতটা অসুস্থ। আজকে ....................." ওকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে লাবণী বলল,"রাখ তোর প্যাঁচাল,আমরা মরি আমাদের জ্বালায় আর তুই বারবার আসিস তোর এক কাহিনি নিয়ে"স্নিগ্ধ বলল, "আমি আসতে দেরি ক..."এবার স্নিগ্ধ কে থামিয়ে দিল অবিনাশ, "তুই থামবি,আমরা তোর দেরির কারণে বিরক্ত না, তুই যে দেরি করবি এটা আমাদের বইয়ের পড়ার মতো মুখস্ত। কিন্তু মেয়েটা যে কেন আসতে এতো দেরি করছে তাই তো বুঝতেছি না! "রবিন বলল," ৯.০০টার মাঝেই আসার কথা,আর এখন বাঁজে ১১.০০টা। ভাগ্যিস,আমাদের কলেজে তেমন ক্লাস হয় না,নয়তো এতক্ষণে....I"লাবণী বিরক্ত হয়ে বলল,"ধুর ছাই,আমি আর এসবে নাই। তোদের যা ইচ্ছা হয় কর। "রবিন বলল, "প্রত্যেকবার এই এক কথাই তো বলিস,ডায়লগটা এবার পাল্টা। "অবিনাশ বলল,"তোরা থামবি, মেয়েটা হয়তো কোনো ঝামেলায় পড়েছে। "লাবণীর কণ্ঠে ঝাঁঝ দেখা দিল,"বিপদ না ছাই,আমি মেয়ে না? আমি রাস্তাঘাটে চলি না? "রবিন বলল,"তুই তো লেডি কিলার। "লাবণীর কণ্ঠের ঝাঁঝ দ্বিগুন হয়ে গেল, "কি বললি,কি বললি তুই! "স্নিগ্ধ এখন কথা বলতে চাচ্ছিল। কারণ,কথা বললে তিনজনই ওকে গিলে খাবে। কিন্তু উপায় না দেখে বলল,"তোরা প্লিজ থামবি। "তিনজন একসাথে বলে উঠলো,"তুই চুপ কর। "এবার তো কিছু বলা স্নিগ্ধের জন্য পাপাস্নিগ্ধ একেবারে চুপ হয়ে গেল। স্নিগ্ধ মনে মনে ভাবতে লাগলো,"সত্যিই কিছু হলো না তো মেয়েটার?"ওদের এবার যে নতুন বন্ধ আসার কথা সে আসলে মেয়ে। নামটা এখনো জানা হয়নি। মেয়েটাও রহস্যময়,নিজের পরিচয়ও দেয়নি। হঠাৎ একদিন অচেনা নাম্বার থেকে স্নিগ্ধের ফোনে ফোন আসে। নিজে যেচে বলে যে সে স্নিগ্ধের কলেজে ভর্তি হবে। স্নিগ্ধকে এটাও বলে যে সবার জন্য যেমন শুভেচ্ছার ব্যবস্থা করে তার জন্যেও যেন করা হয়। স্নিগ্ধ প্রথমে ভেবেছিলো কেউ তার সাথে ফাজলামো করছে। পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছে,সত্যিই একজন মেয়ে তাদের কলেজে ভর্তি হবে। হঠাৎ,অবিনাশ ওকে ধাক্কা দেয়, "কিরে,দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি স্বপ্ন দেখিস নাকি!ঐ দেখ একটা মেয়ে আসতেছে। "স্নিগ্ধ মেয়েটাকে ভালো করে দেখে নেয়। শ্যামবর্ণ গায়ের রং,চুলগুলো একটু কোঁকড়ানো,সামান্য মোটা দেখতে মেয়েটা একদম স্নিগ্ধের সামনে এসে দাঁড়ায়,"এই যে,চিনতে পেরেছেন আমাকে মুমতাহিন ইসলাম স্নিগ্ধ। শুনেছি প্রত্যেকবার আপনি নতুনদের বরণ করে নেন। কই,আমাকে তো কেউ বরণ করছেন না?"রবিন হাতে ধরে থাকা ফুলগুলো মেয়েটার হাতে দেয়,আর বলে,"আমাদের কলেজে আপনাকে স্বাগতম। "লাবণী হঠাৎ বলে উঠল,"রাখ তোর স্বাগতম। আগে শোন ৯.০০টার কথা বলে ১১.০০টা পার করে আইছে ক্যান? "লাবণী ক্ষেপে গেলে ওর আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা শুরু করে। অবিনাশ বলল,"লাবণী,কিরকমভাবে কথা বলছিস!ও নতুন এসেছে। হয়তো কোনো সমস্যায়...."লাবণি বলল,"তোকে আর উনার হয়ে সাফাই গাইতে হবে না। "এবার মেয়েটা বলল,"বন্ধ না হতেই পর করে দিচ্ছেন! আসলে আমার স্কুটি নষ্ট হয়েছিলো। যা হোক,আমি আর স্নিগ্ধের মতো নিজের কাহিনি না বলি। আমার নাম তুলি,ফাতেমাতুজ্জোহা তুলি। "সবাই সবার নাম বলল। শুধু লাবণী চুপ। এবার তুলি বলল,"এতো রাগ!আচ্ছা,একটা অফার দিচ্ছি নাম বললে আমি আজ আপনাদের সবাইকে যা খেতে চাইবেন খাওয়াবো। এবার লাবণীর মুখে হাসি এলো,"খাওয়ার কথা হলে আমি রাজি,আমার নাম লাবণী। শুধুই লাবণী,আগেপাছে কিছু নাই। "রবিন ফোঁড়ন কাটল, "দ্য লেডি কিলার"লাবণি বলে উঠলো,"কি বললি,কি বললি আবার তুই!দাড়া তোর একদিন কি আমার একদিন। "কিন্তু তুলি থামাল,"যাবে আমার সাথে,না ঝগড়া করবে?"এবার সবাই চুপচাপ ওর সাথে চলল। মেয়েটাকে স্নিগ্ধের ভালোই লাগল। যখন খেতে বসল,তখন তুলি বলল, "স্নিগ্ধ সাহেব, আপনি জানি তখন থেকেই চুপ হয়ে আছেন? বোবা হলেন নাকি? "অবিনাশ উত্তর দিল,"ওর কথা না বলাতেই মঙ্গল তাই। "এবার আর স্নিগ্ধ চুপ করে থাকলো না,বললো,"আমি তো আর তোরা না। তুই আমাদের ট্রিট দিচ্ছে, অথচ কথা বলছে আপনি করে,মুখে কি বন্ধুত্বের অতি পরিচিত ডাক 'তুই' আসে না? "তুলি বলল,"সরি,সরি। আমি আসলে সোজাসুজি তুই বলতে পারি না। তুমি দিয়ে নাহয় শুরু করি। ধীরে ধীরে তুমি থেকে তুই। তুমি কি এখন খাবে না কথা বলবে?"লাবণী বলল,"ধুর ঐ কিছু খায় নাকি। তোর খেতে হবে না। "বলেই স্নিগ্ধে পাতের সবকিছু লাবণী নিজের পাতে তুলে নিলো।
আজ সারাদিন স্নিগ্ধের অনেক মজা হয়েছে। তুলি মেয়েটা বেশ চমৎকার,হোক না একটু মোটা,হোক না শ্যাম। কেন জানি স্নিগ্ধ তুলির প্রতি গভীর এক টান অনুভব করে,ওর সেই কথাগুলো,সেই হাসি,তুমি করে ডাকা সবকিছুই কেন জানি স্নিগ্ধের অসম্ভব ভালো লাগোবেখেয়ালি মনে তুলির কথা ভাবতে ভাবতে স্নিগ্ধ কখন যে নিজের বাড়ি পিছনে ফেলে এসেছে সেটা ও টেরও পায়নি। হঠাৎ স্নিগ্ধের মনো হলো ওকে কেউ পিছন থেকে ডাকছে,ঘুরে দেখে রবিন ছুটে আসছে। রবিনকে দেখে স্নিগ্ধ দাঁড়িয়ে যায়। রবিন ওর সামনে এসে হাঁপাতে থাকে। "কিরে হাপাচ্ছিস কেন আর এভাবে ছুটছিস যে পাগলের মতো!"স্নিগ্ধ অবাক হয়ে জানতে চায়। রবিন খেঁকিয়ে ওঠে,"শালা,কতক্ষণ থেকে ডাকছি শোনার নাম নেই। আর তুই কোথায় যাচ্ছিস?"স্নিগ্ধ বলে উঠে,"কেন!বাড়ি। ""শালা,এই তোর বাড়ি যাওয়াতোর বাড়ি পিছনে ফেলে এসেছিস,আর তুই কিনা বাড়ি যাচ্ছিস!"স্নিগ্ধের এবার খেয়াল হয়। "আরে নাহ!একটু হাটছিলাম আর কি!"এই বিকেল বেলা হাঁটা!এর আগে কখনো তো দেখিনি। ""এতদিন দেখিসনি আজ তো দেখলি,থাক এবার বাড়ি যাব। ""চল আমিও আজ তোর বাড়ি যাব। তখন যে বললি আন্টি অসুস্থ,একটু দেখা করে আসি। "স্নিগ্ধ আর কিছু বলে না। রবিনকে সাথে নিয়ে বাড়ির পথে রওয়ানা হয়ে পড়ে। বাড়িতে ঢুকেই দেখে মা ওর জন্য খাবার নিয়ে বসে আছে। এটা ওর মা প্রতিদিন করে। স্নিগ্ধ যখনি আসুক ন কেন,তিনি নিজ হাতে ছেলেকে না খাওয়ালে শান্তি পান না। এতে স্নিগ্ধ মাঝে মাঝে বিরক্তও হয়। সে কি এখনো ছোট নাকি!আজ যদি রবিন এর সামনে তুলে খাওয়ায় তো রবিন পুরো কলেজে তা ঢোল পিটিয়ে জানাবে। তাই স্নিগ্ধ বলে,"মা আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি। তুমি খেয়ে নাও। "ওর মা তবুও জোর করে। এবার রবিন বলে উঠে,"খেয়েছিস তো কি হয়েছে!আর তোর খাবার না লাবণী খেলাচল,আজ আমিও তোর সাথে খাব। "স্নিগ্ধ মনে মনে ভাবল,"সেরেছে আজ। "অগত্যা স্নিগ্ধ বসে গেল মায়ের সামনে। রবিন প্লেট নিতে যাচ্ছিল,কিন্তু স্নিগ্ধের মা ওকে টেনে বসিয়ে দিল। রবিন কিছু না বুঝে বসে পড়ল। আর তিনি নিজ হাতে দুজনকে খাইয়ে দিতে লাগলো। স্নিগ্ধ ভাবছে রবিন কাল কলেজে কি কি বলতে পারে ওকে পঁচানোর জন্য। ভাবতে ভাবতে রবিনের দিকে তাকিয়ে দেখে রবিন কাঁদছে,একদম ছোট বাচ্চার মতো ফুঁপিয়ে ফুপিয়ে। স্নিগ্ধ অবাক হয়ে জানতে চাইল,"কাঁদছিস কেন?"রবিন এবার ভেউ করে কেঁদে দিল,ঐ অবস্থায় নাক টানতে টানতে বলল,"এর আগে কেউ আমাকে তুলে খাওয়ায় নি। মাকে বললে বলত,নিজ হাতে খাওয়া শেখো। "স্নিগ্ধের মা নিজ আঁচল দিয়ে রবিনের চোখ মুছে দিল। এবার রবিন স্নিগ্ধকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। স্নিগ্ধ অবাক হয়ে গেল। যেখানে ও বিরক্ত হয়,সেখানে কেউ একজন কাঁদছে। না,দুঃখের কান্না না,খুশির কান্না। রবিন ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলতে লাগলো,"আমি কিন্তু এখন থেকে মাঝে মাঝেই তোর বাড়িতে আসব। "ওর মা দুজনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন,যেন এখনো ওরা সেই ছোট্ট খোকাটাই আছে।
তুলির কলেজে আসার ২মাস পেরিয়ে গেছে। কিন্তু,স্নিগ্ধ এখনো ওকে কিছু বলতে পারেনি। তবে তুলি মনে হয় বুঝতে পেরেছে। সেদিন তুলি সবার সাথে কি নিয়ে যেন কথা বলছিলো। কিন্তু স্নিগ্ধ আসায় সবাই চুপ করে গেল। স্নিগ্ধ কিছু বুঝতে পারেনি। "কিরে সবাই এভাবে বসে কেন,ক্লাস করবি না?"সবাই উত্তর দেয়,"ন্যাহ!"হঠাৎ অবিনাশ বলে চল আজ কোথাও ঘুরতে যাই। অনেকদিন থেকে ঘুরতে যাই না। সবাই রাজি হয়। কিন্তু স্নিগ্ধ বেঁকে বসে। "না রে,মা বাড়িতে একা যেতে পারব না। "তবুও সবাই জোর করে ওকে নিয়ে যায়। রবিন এই বলে ওকে সি দেয় যে,ঘরে এসে সবাই ওর মায়ের সাথে দেখা করবে। বাসে আগেভাগেই অবিনাশ আর রবিন একজোড়া ছিট দখল করে নেয়। আর লাবণী আর তুলি বসে অন্যজোড়ায়। রবিন ভেবে পায় না কোথায় বসবে। হঠাৎ লাবণী নিজের সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়,আর একটি মহিলাকে দেখিয়ে দিয়ে বলে ও ঐ মহিলাটার পাশে বসবে। স্নিগ্ধকে তুলির পাশে বসিয়ে দিয়ে লাবণী চলে যায়। স্নিগ্ধের মনে হতে থাকে তুলির পাশে বসার চেয়ে সুন্দর বিষয় কিছুই নেই। হঠাৎ তুলি বলে ওঠে,"তুমি এতো ভীতু কেন!"তুলির এ কথায় বেশ হকচকিয়ে যায় স্নিগ্ধ"কে,আমি!আমি ভীতু হতে যাব কেন?"যদি ভীতুই না হবে তবে আমাকে যে ভালোবাস এটা বলছ না কেন?""আরেহ নাহ,ভালোবাসতে যাব কেন!তোমাকে আমার ভালো লাগে এই আর কি। ""ও"কেউ আর কোনো কথা বাড়ায় না। দুজনে চুপ করে থাকে। আর ওদিকে ওরা কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করে এরা কি বলো তা শোনার জন্য। এবার নীরবতা ভাঙে স্নিগ্ধ। "তুলি,আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি। কিন্তু ভয় পেয়েছিলাম যদি এই কথাটা বললে তুমি আমাদের বন্ধুত্ব ভেঙে ফেল। আর তাছাড়া তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা তাও তো জানি না। ""তুমি রাজি থাকলে একটা বয়ফ্রেন্ড কপালে জুটবে। "এবার স্নিগ্ধ আর কথা বলে না। কথা বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছে। হঠাৎ হাতে কারো হাতের ছোয়া পেয়ে যেন সম্বিৎ ফিরে পায় ও কিছুক্ষণ অপেক্ষা শেষে স্নিগ্ধ তুলিকে বলে,"আমার সঙ্গিনী হবে?"তুলি শুধু উপর নিচে মাথা নাড়ে।
স্নিগ্ধ হাসপাতালের বারান্দায় পায়চারী করছে,ওর বন্ধুরা কে সান্তনা দিচ্ছে। ওরা সবাই ঘুরে এসে স্নিগ্ধের মায়ের সাথে দেখা করতে আসে। এসে দেখে তিনি খুবই অসুস্থ। সবাই মিলে তাঁকে ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বেরিয়ে এসে বলল তাঁকে যেন কোনোভাবেই একা না রাখা হয়। সবসময় যেন দেখেশুনে রাখা হয়। এরপর কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে নিয়মিত খাওয়াতে বলেন এবং ৭দিন পর নিয়ে যেতে বললেন।
৭দিন পর স্নিগ্ধ মাকে নিয়ে বাড়ি গেল। এই কয়দিন ও কারো খোঁজ নিতে পারে নি। মাঝে মাঝে অবিনাশরা এসে দেখে করে গিয়েছে। কিন্তু কেন জানি তুলি একবারের জন্যেও আসেনি। স্নিগ্ধ ওর মাকে ঔষধ খাইয়ে কলেজে গেল। গিয়ে দেখে অবিনাশরা বসে আসে চত্ত্বরে। কিন্তু তুলি নেই। স্নিগ্ধ গিয়ে জিজ্ঞাসা করে,"কিরে তুলি কোথায়?ওকে কেন জানি দেখলাম না। সেদিনের পর থেকে দেখি না!"অবিনাশ বলল,"বাদ দে তো,তুলি কলেজ পাল্টিয়েছে। কয়েকদিন আগে একজন ছেলেকে নিয়ে এসে বলল যে ছেলেটা ওর বয়ফ্রেন্ড। আর যাবার আগে বলে গিয়েছে ও তোর সাথে থাকতে পারবে না। যে তার মাকে নিয়ে এত ব্যস্ত থাকে,একটা ফোন পর্যন্ত করতে পারে না,তার সাথে সম্পর্ক রাখা ওর সম্ভব না। "লাবণী বলল,"দোস্ত,মন খারাপ করিস না। ওর মতো আরো কত মেয়ে আসবে যাবে। "স্নিগ্ধ আর দাঁড়ায় না,এক দৌড়ে চলে যায় ব্রিজের ধারে। ওর মন খারাপ হলেই ও এখানে চলে আসে। স্নিগ্ধ বিশ্বাস করতে পারে না কথাগুলো। তুলি এমন হতেই পারে না। ওরা নিশ্চই মিথ্যা কথা বলেছে। স্নিগ্ধ তুলিকে ফোন দেয়। কিন্তু ওর নাম্বারকে ব্লকে পায়। ফেসবুকে খোঁজ করে,সেখানেও ব্লক। স্নিগ্ধ এবার চুপচাপ চায়ের দোকানের একটা বেঞ্চে বসে পড়ে। আজ যেন আকাশটাও ওর মন খারাপের সুযোগ নিয়ে গর্জন করছে। অন্ধকার করে আসছে ঈষাণ কোণ। যেন ওর সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। চায়ের দোকানদার ছোকড়াটা বলে,"ভাইজান,চা খাবেন?"স্নিগ্ধ আজ কোনো উত্তর দেয় না। সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে সাতদিনেই সবকিছু নষ্ট হয়ে যাবে। দেখতে দেখতে আকাশ আরো খারাপ হয়ে আসে। দোকানের ছোকড়াটা আরেকবার বলে,"ভাইজান ঝড় আইবো মনে হয়। বাড়ি যান না?আমি কিন্তু দোকান বন্ধ করুম"স্নিগ্ধ এবারও উত্তর দেয় না। দোকানদার ছোকড়াটা আর কথা না বলে দোকান বন্ধ করে। আর যাবার আগে আরেকবার বলে যায় স্নিগ্ধ যেন বাড়ি চলে যায়। স্নিগ্ধ চুপচাপ পাথর হয়ে বসে থাকে। দেখতে দেখতে পুরো এলাকা ফাঁকা হয়ে। আসে। হঠাৎ ওর মরে যেতে ইচ্ছা করে। স্নিগ্ধ ব্রিজের ধারে এসে দাঁড়ায়,নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। ও সাঁতার জানে না। হঠাৎ মায়ের মুখটা ওর চোখের সামনে ভেসে ওঠে,"মা কি ঔষধ খেয়েছে?"ওর মনে হতে থাকে মা ওর জন্য খাবার নিয়ে বসে আসে। ও ছাড়া যে ওর মায়ের আর কেউ নেই। স্নিগ্ধ মায়ের প্রতি এক ধরনের ভালোবাসা অনুভব করে। ওর বন্ধুদের কথা মনে পড়ে। ওরা কি ওর কাছে কম কিছু!আর ও কিনা জনের জন্য মরতে যাচ্ছে। হ্যা,কষ্ট হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তাই বলে মৃত্যুকে পথ হিসেবে বেছে নিবে সে। স্নিগ্ধ আর ভাবতে পারে । কিছুক্ষণ পর স্নিগ্ধকে বাড়ির পথে হাঁটতে দেখা যায়,যে তার মায়ের কাছে ফিরে যাচ্ছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
mdawladhosen এই গল্পটি আমার লেখা, আমি মোঃ আওলাদ হোসেন। গল্পটি চুরি করা হয়েছে। আর এরপর থেকে আমি আমার আইডিতে লগ ইন করতে পারছি না। নতুন আইডি খুলে আমি সাহায্য চাওয়ার সাথে সাথেই আমার নতুন আইডিও ব্লক করে দেয়া হয়েছে। আমার মত ভুল জেন কেউ আর না করে। কেউ সাহায্য করতে চাইলে আমার জিমেইল এ দয়া করে যোগাযোগ করুন...।
ফয়জুল মহী অনন্যসাধারণ লিখনী । শুভেচ্ছা সতত ।
ভালো লাগেনি ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
Sumaiya Rahman Bobi অনেক সুন্দর হয়েছে
ভালো লাগেনি ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
Neerob ভালোবাসা অনেক রকম। ভোট থাকল।
ভালো লাগেনি ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
মোঃআওলাদ হোসেন ধন্যবাদ আপনাদের
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
Supti Biswas দারুণ লেখা। ভোট রইল। আমার পাতায় আমন্ত্রণ আপনাকে।
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
গোলাপ মিয়া অসাধারণ লাগল প্রিয়। ভোট রইল। আমার গল্প কবিতায় আপনাকে আমন্ত্রণ।
ভালো লাগেনি ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ভালোবাসা মানেই শুধু ছেলে আর মেয়ের প্রণয় নয়।এ বিষয় তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

১০ জানুয়ারী - ২০২০ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“ডিসেম্বর ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ ডিসেম্বর, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী